
মেজর (অবঃ) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় রিমান্ডে থাকা আসামী প্রদীপ কুমার দাশকে ১দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ১৫দিনের রিমান্ডেও মুখ খুলেনি। তাই ১৫ দিনের বেশি রিমান্ড আবেদনের সুযোগ না থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানো হলো।
এরআগে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রদীপ দাশের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার সময় তাকে আদালতে সোপর্দ করে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১৫।
এর আগে একইদিন সকালে সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড শেষে আরো তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার সোয়া ১২টার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট তামান্না ফারাহ এই আদেশ দেন। এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সিনহা হত্যা মামলার এই তিন আসামীকে আদালতে তুলে র্যাব।
তিন আসামি হলেন—টেকনাফ মারিশবুনিয়া এলাকার নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও মো. আয়াছ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব ১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ঘটনা সম্পর্কে অধিকতর যাচাইয়ের স্বার্থে আমরা এই তিন আসামীর আরো ৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
পুলিশের গুলিতে মেজর (অবঃ) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে র্যাবের একটি দল টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকা থেকে গত ৯ আগস্ট পুলিশের দায়ের মামলার এই তিন সাক্ষীদের গ্রেফতার করেন। পরদিন তাদের আদালতে তোলা হয়। ১২ আগস্ট র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তার ১০ দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এই তিন আসামিকে গত ১৪ আগস্ট র্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত ২০ আগস্ট আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর পর ২২ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ৭ দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। চার দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাদের আদালতে তোলা হয়।
র্যাব সূত্র মতে, আত্মসমর্পণের পর গত ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ, লিয়াকত ও নন্দদুলালসহ সাত পুলিশের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সাত দিনের রিমান্ড শেষে দ্বিতীয় দফায় ২৪ আগস্ট
আরো সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছিল র্যাব। আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। ওই চার দিন রিমান্ড শেষ হলে তদন্তের স্বার্থে তৃতীয় দফায় আরো চার দিনের আবেদন করা হলে গত শুক্রবার (২৮ আগস্ট) আদালত তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সোমবার (৩১ আগস্ট) বেলা দুইটার দিকে র্যাবের একটি দল সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (টেকনাফ-৩) আদালতে তোলেন।
এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খায়রুল ইসলাম অধিকতর তথ্যের স্বার্থে আরো ১ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক তামান্না ফারাহ ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে প্রদীপকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।।
গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এবিপিএন চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন মেজর (অব:) সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় একটি মামলা করে। মামলায় এ পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, এপিবিএনের তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এপিবিএনের তিন পুলিশ সদস্য পৃথকভাবে বুধ ও বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারা মতে জবানমন্দি দেন। যার কারণে এ তিন পুলিশ সদস্য কারাগারে রয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মো. রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। পরে আরো ছয়জনকে আসামী করা হয়। দুইজন ছাড়া সব আসামী গ্রেফতার হয়েছে।